বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ২০২৪, ১০:২৬ অপরাহ্ন

ডিজিএম সেজে নেওয়া হয় ভাইভা

ডিজিএম সেজে নেওয়া হয় ভাইভা

স্বদেশ ডেস্ক: প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে ভুয়া নিয়োগ সিন্ডিকেটের কারসাজির ঘটনা ফাঁসের পর এবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ভুয়া নিয়োগপত্র দেওয়ার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতিষ্ঠানটির উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) পরিচয় দিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়ার নাটক সাজিয়ে একটি চক্র লুটে নিয়েছে অর্থ। চক্রের দেওয়া নিয়োগপত্র নিয়ে গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে যোগ দিতে গিয়ে জনৈক চাকরিপ্রার্থী জানতে পারেন নিয়োগপত্রটি ভুয়া।

গতকাল সোমবার দুপুর ১২টার সময় চাকরিপ্রার্থী সোহাইব ফারাজী ও তার বড় ভাই আশরাফুল ইসলাম আসেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ভবনে। নড়াইল থেকে আসা ওই ব্যক্তিরা রিসিপশনে মতিঝিল শাখার ডিজিএম আবদুল কুদ্দুসের রুমের খোঁজ চান। দায়িত্বরত কর্মীরা তাদের জানান, আবদুল কুদ্দুস নামে ওই শাখায় কোনো ডিজিএম নেই, আগেও ছিল না।

চাকরিপ্রার্থীর বড় ভাই আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ছোট ভাই আজ (গতকাল) চাকরিতে জয়েন করবে। ‘নিয়োগপত্র’ দিয়ে আজ আসতে বলেছে।’ রিসিপশনে কর্তব্যরতরা এ সময় কাগজপত্র দেখতে চাইলে খামের ভেতর থেকে নিয়োগপত্রসহ কয়েকটি কাগজ দেখানো হয়। দায়িত্বরতরা নিয়োগপত্রটি দেখে এটি ভুয়া বলে তাদের জানান।

প্রতারিত হওয়া ফরাজী বলেন, তাদের বাড়ি নড়াইল জেলার কালিয়া থানার সাতবাড়িয়ায়। একই গ্রামের ইমরান ও বিপ্লব চাকরি দেওয়ার কথা বলে আবদুল কুদ্দুসের কাছে নিয়ে যান। তারা গ্রামের বিভিন্ন লোককে টাকার বিনিময় চাকরি দিয়ে থাকেন। গত ২৫ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ভবনের নিচতলায় আবদুল কুদ্দুসের সঙ্গে পরিচয় হয় ফরাজীর।

ওই সময় কুদ্দুস বলেন, দ্বিতীয় তলায় তার অফিস। মৌখিক পরীক্ষার কথা বলে দাঁড়িয়ে সামান্য কিছু আলাপ হয় তাদের মধ্যে। এর পর চাকরি দেবে বলে আমার কাছ থেকে দুই লাখ টাকা চান। পরে আবদুল কুদ্দুস টাকার বিনিময় এ নিয়োগপত্র দেন। তিনি বলেন ২ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় বাংলাদেশ ব্যাংকে নিয়োগপত্র নিয়ে গেলেই চাকরি হয়ে যাবে। তারা (প্রতারক চক্র) জানায়, নিয়োগের পর তিন মাস ট্রেনিং হবে। ট্রেনিংয়ের সময় বেতন হবে ১৬ হাজার টাকা। এর পর প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা বেতন দেবে। আমার পরিবার অনেক কষ্ট করে ঋণ করে দুই লাখ টাকা দিয়েছে। এখন চাকরি তো হলোই না উল্টো ঋণ পরিশোধ করতে হবে।

ফরাজী জানান, আবদুল কুদ্দুসের সম্পর্কে কোনো কিছুই জানেন না তিনি। তবে মোহাম্মদপুরে কুদ্দুসের বাসা আছে বলে আমাকে জানানো হয়। টাকা নেওয়ার আগ পর্যন্ত কুদ্দুসের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। কিন্তু ১ তারিখ থেকে তার মোবাইল নম্বর বন্ধ এবং কোনো যোগাযোগ হয়নি।

নিয়োগপত্রে দেখা যায়, আবদুল কুদ্দুসের সিল ও স্বাক্ষর রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিজিএম পরিচয় দিয়ে। সোহাইব ফরাজীকে পিয়ন/এমএলএসএস পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তার নিয়োগের স্থান বলা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক জেনারেল শাখা (২৬তম তলা) প্রধান কার্যালয় মতিঝিল। ২৯ আগস্ট বেলা সাড়ে ১১টায় যোগদানের সময় উল্লেখ করা হয়েছে।

পুলিশ ভেরিফিকেশনের আরেকটি চিঠি দেওয়া হয় ফরাজীকে। সেখানে থানা থেকে তার সম্পর্কে অভিযোগ নেই জানিয়ে নিয়োগপত্রে উল্লিখিত তারিখে যোগদান করতে বলা হয়েছে।

ভুক্তভোগীর বড় ভাই আশরাফুল ইসলাম বলেন, কাগজ দেখে আমার সন্দেহ হয়। প্রতারক চক্র কত ট্যালেন্ট তারা পুলিশ ভেরিফিকেশনও নকল করেছে। এরা গ্রামের সহজ-সরল মানুষকে বোকা বানিয়ে চাকরির লোভ দেখিয়ে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, তার নিয়োগপত্র দেখেই বোঝা যাচ্ছে এটা ভুয়া। বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো নিয়োগ দিলে তা সার্কুলারের মাধ্যমে জানানো হয়। এ ছাড়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকে অফিস সহকারী পিয়ন পদে লোক নেওয়া হচ্ছে বলে সম্প্রতি কোনো বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটে। কিন্তু এ বিষয়ে আমাদের কিছু করার থাকে না। এটি দেখার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। তারাই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে থাকে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তা পরিচয়দানকারী আবদুল কুদ্দুসের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ফরাজীর দেওয়া নম্বরে ফোন করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকে এর আগে ভুয়া নিয়োগ প্রদান, নিয়োগের নামে অর্থ গ্রহণের ঘটনা ঘটেছে। বছর দুয়েক আগে হাতেনাতে দুই নিরাপত্তাকর্মী ধরা পড়লেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877